মসজিদ কমিটি গঠন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল কাজ। এর মাধ্যমে মসজিদের সুষ্ঠু পরিচালনা, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং দ্বীনি কার্যক্রম নিশ্চিত করা হয়। মসজিদ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি সুনির্দিষ্ট রেজুলেশন লেখা আবশ্যক। এই রেজুলেশনটি ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে এবং কমিটির বৈধতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
১. রেজুলেশন কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
রেজুলেশন হলো একটি লিখিত প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত, যা কোনো সভা বা বৈঠকে গৃহীত হয়। মসজিদ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রেজুলেশন হলো কমিটির গঠন, সদস্য, কার্যকাল এবং দায়িত্ব সম্পর্কে একটি আনুষ্ঠানিক লিখিত দলিল। এর গুরুত্ব নিচে তুলে ধরা হলো:
- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি: রেজুলেশনে কমিটির সদস্যদের নাম, পদ এবং দায়িত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে, যা আর্থিক এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
- আইনি বৈধতা: রেজুলেশন একটি আনুষ্ঠানিক দলিল হওয়ায় এটি কমিটির কার্যকারিতার বৈধতা প্রদান করে। প্রয়োজনে এটি আইনি প্রমাণ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- স্থিরতা: নতুন কমিটি গঠন বা পরিবর্তনের সময় এই রেজুলেশন একটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।
রেজুলেশন লেখার ধাপ ও প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু
একটি কার্যকর ও সম্পূর্ণ রেজুলেশন লেখার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করা উচিত। নিচে ধাপে ধাপে এর নিয়মাবলি আলোচনা করা হলো।
ধাপ ১: শিরোনাম ও প্রারম্ভিক তথ্য
রেজুলেশনের শুরুতেই একটি সুস্পষ্ট শিরোনাম লিখতে হবে। যেমন, “মসজিদ কমিটি গঠনের রেজুলেশন”। এরপর রেজুলেশনের তারিখ, সভার স্থান এবং সভার সভাপতির নাম উল্লেখ করতে হবে।
- উদাহরণ:
- রেজুলেশন নং: [একটি নির্দিষ্ট নম্বর দিন, যেমন: রে/২০২৫/০১]
- তারিখ: [তারিখ]
- স্থান: [মসজিদের নাম ও ঠিকানা]
- সভাপতি: [সভাপতির নাম ও পদবি]
ধাপ ২: সভার উদ্দেশ্য ও অংশগ্রহণকারীদের তালিকা
এই অংশে সভার মূল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, অর্থাৎ, কেন এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একই সাথে সভায় উপস্থিত সকল সদস্যের নাম, পিতা/স্বামীর নাম এবং মোবাইল নম্বরসহ একটি তালিকা যুক্ত করা যেতে পারে। এটি রেজুলেশনের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।
ধাপ ৩: নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা
এবারে নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাবনাটি লিখতে হবে। এখানে উল্লেখ করতে হবে যে, উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে একটি নতুন কার্যকরী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটির মেয়াদ কত দিনের হবে, তাও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন।
- উদাহরণ:
- “আজকের এই সভায় উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে ও আলোচনার ভিত্তিতে [মসজিদের নাম] পরিচালনা করার জন্য একটি নতুন কার্যকরী কমিটি গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই কমিটির কার্যকাল হবে আগামী ২ (দুই) বছর।”
ধাপ ৪: কমিটির সদস্যদের নাম ও পদবি
এটি রেজুলেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে কমিটির সকল সদস্যের নাম, পিতা/স্বামীর নাম, মোবাইল নম্বর এবং তাদের পদবি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। একটি ছক বা তালিকা আকারে এটি উপস্থাপন করা যেতে পারে।
- উদাহরণ: | ক্রমিক নং | নাম | পিতার নাম | পদবি | মোবাইল নম্বর | | :—: | :—: | :—: | :—: | :—: | | ১ | জনাব ক | জনাব খ | সভাপতি | ০১৭XXXXXXX | | ২ | জনাব গ | জনাব ঘ | সহ-সভাপতি | ০১৮XXXXXXX | | ৩ | জনাব ঙ | জনাব চ | সাধারণ সম্পাদক | ০১৯XXXXXXX | | … | … | … | … | … |
সাধারণত একটি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদবিগুলো হলো: সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ (ক্যাশিয়ার), কার্যনির্বাহী সদস্য।
ধাপ ৫: কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি
এই অংশে কমিটির প্রধান প্রধান দায়িত্বগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতে কার কী কাজ, তা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে না।
- উদাহরণ:
- “মসজিদের দৈনিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ।
- মসজিদের আর্থিক হিসাব সংরক্ষণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
- দ্বীনি শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
- প্রয়োজনে নতুন কাজের জন্য বিশেষ সভা আহ্বান করা।”
ধাপ ৬: রেজুলেশন অনুমোদন ও স্বাক্ষর
রেজুলেশনের শেষে উপস্থিত সকল সদস্যের স্বাক্ষর নিতে হবে। এর মাধ্যমে সবাই গৃহীত সিদ্ধান্তে সম্মত হয়েছে, তার প্রমাণ নিশ্চিত হবে। প্রথমে সভার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করবেন, এরপর অন্যান্য সদস্যগণ স্বাক্ষর করবেন। প্রতিটি স্বাক্ষরের নিচে নাম ও পদবি লিখে দেওয়া যেতে পারে।
সম্পূর্ণ রেজুলেশনের একটি নমুনা
মসজিদ কমিটি গঠনের রেজুলেশন
রেজুলেশন নং: [রেজুলেশন নং] তারিখ: [তারিখ] স্থান: [মসজিদের নাম ও ঠিকানা] সভাপতি: [সভাপতির নাম ও পদবি]
আজ [তারিখ] তারিখে [সময়]-এ [মসজিদের নাম]-এর পরিচালনা কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব [সভাপতির নাম]। সভায় উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে এবং দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে একটি নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কমিটির সদস্যগণের তালিকা:
ক্রমিক নং | নাম | পিতার নাম | পদবি | মোবাইল নম্বর | স্বাক্ষর |
১ | [নাম] | [পিতার নাম] | সভাপতি | [মোবাইল] | |
২ | [নাম] | [পিতার নাম] | সহ-সভাপতি | [মোবাইল] | |
৩ | [নাম] | [পিতার নাম] | সাধারণ সম্পাদক | [মোবাইল] | |
৪ | [নাম] | [পিতার নাম] | কোষাধ্যক্ষ | [মোবাইল] | |
৫ | [নাম] | [পিতার নাম] | কার্যনির্বাহী সদস্য | [মোবাইল] | |
৬ | [নাম] | [পিতার নাম] | কার্যনির্বাহী সদস্য | [মোবাইল] |
কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি:
- মসজিদের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমআ, ঈদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা।
- মসজিদের আর্থিক হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রতি ৩ মাস অন্তর তা প্রকাশ করা।
- কমিটির কোনো সদস্য যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এই রেজুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো। এই কমিটি আগামী ২ (দুই) বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
স্বাক্ষরসমূহ:
[সভাপতির স্বাক্ষর] সভাপতি [নাম ও পদবি]
[সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর] সাধারণ সম্পাদক [নাম ও পদবি]
[অন্যান্য সদস্যগণের স্বাক্ষর]
এই ধাপগুলো অনুসরণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভরযোগ্য মসজিদ কমিটি গঠনের রেজুলেশন তৈরি করা সম্ভব। এটি কেবল একটি প্রশাসনিক দলিল নয়, বরং মসজিদের পবিত্রতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার একটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
আমি একটি আইটি ফার্মের রিলেশনশীপ অফিসার। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ করছি। অবসর সময়ে লেখালেখি করি।